গাজায় নিহত ৩০ হাজার ছাড়াল ।খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যা ইসরাইল ‘ধীর গতিতে’ শিশুদের হত্যা করছে : সেভ দ্য চিলড্রেন :: রমজানের শুরুতে আল আকসায় যাওয়ার আহবান হামাসেরপ্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরাইলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে। তবে মধ্যস্থতাকারীরা বলছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে কয়েক দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে।গাজায় খাদ্য সহায়তার জন্য যারা দাতব্য সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর নির্ভর করছে তাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডের অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভুখন্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে শিশুরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উত্তর গাজার হাসপাতালে পানিশ‚ন্যতা ও অপুষ্টিতে ছয় শিশু মারা গেছে বলে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি এই ভুখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে দুই শিশু মারা গেছে বলে বুধবার মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে। এর আগে তারা জানিয়েছিল, উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে চার শিশু মারা গেছে, এবং অন্য সাতজন গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। গাজায় ইসরাইলের হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে উত্তর গাজায় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে বলছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি নৈতিক ও মানবিক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে।’ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি আগ্রাসনে ৩০ হাজার ৯৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭০ হাজার ৩২৫ জন ফিলিস্তিনি। এ দিকে হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।
খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যা : গাজা শহরের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরাইলের সেনা। এতে অন্তত ৭৭ জন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি নিহত হন। হামলা চালানোর পর লাশগুলো ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকে। ইসরাইলি বাহিনীর হামলার কারণে উদ্ধারকারীরা সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। কয়েকদিন থেকেই মরিয়া হয়ে খাবার খুঁজছেন দক্ষিণ গাজাবাসীরা। অপুষ্টি ও অনাহারের অনেকেই পায়ে হেঁটে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছেন তারা। বুধবার ইসরাইলি বাহিনীর আর্টিলারি হামলায় গাজা শহরের উপক‚লীয় আল-রশিদ রাস্তায় খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু তাই না, কামাল আদওয়ান ও আল-শিফা হাসপাতালে পানিশ‚ন্যতা ও অপুষ্টিতে ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ইসরাইল ‘ধীর গতিতে’ শিশুদের হত্যা করছে : শিশুদের জন্য সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-এর আলেকজান্দ্রা সায়েহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজার শিশুরা অনাহারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যখন খাদ্য সহায়তা সীমান্তের ওপারে আটকে আছে। সাইয়েহ আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘গাজায় আমরা এখন যা দেখছি তা হল শিশুদের হত্যা। প্রায় কোনো সাহায্য অবশিষ্ট নেই এবং তাদের কাছে কিছুই আসছে না।’ ‘শিশুরা ক্ষুধার্ত থাকছে যখন খাবারে ভরা ট্রাক আক্ষরিক অর্থে কয়েক মাইল দূরে অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।’ ‘আমরা জানি যে এটি মূলত ইসরাইলি বোমাবর্ষণ এবং বিধিনিষেধের কারণে ঘটছে যা খাদ্য সহ মানবিক সহায়তার নিরাপদ বিতরণকে বাধা দিচ্ছে।’
রমজানের শুরুতে আল আকসায় যাওয়ার আহবান হামাসের : রমজানের প্রথম দিনেই ফিলিস্তিনিদের জেরুসালেমে আল আকসা মসজিদ যাওয়ার ডাক দিলেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। তিনি বলেছেন, ‘জেরুসালেম এবং পশ্চিম তীরে যে ফিলিস্তিনিরা আছেন, তাদের বলছি, রমজানের প্রথম দিনে আল আকসা যান।’ জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ-সহ অনেক দেশই হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। এখন ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাইডেন বলেছেন, পবিত্র রামজান মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হতে পারে। সেই অবস্থায় হামাস নেতা ফিলিস্তিনিদের আল-আকসায় যেতে বললেন।
জেরুসালেমের ওল্ড সিটিতে হারাম আল-শরিফ কমপ্লেক্সের একটা অংশে আছে আল-আকসা মসজিদ, যা মুসলিমদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। এই জায়গাটিকে টেম্পল মাউন্ট বলা হয়, যা ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র এলাকা। ইসরাইলের সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাস নেতার মন্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তার অভিযোগ, এভাবে লড়াইটা অন্য ফ্রন্টেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ইসরাইল যেন মুসলিমদের রমজানে আল-আকসা মসজিদে প্রার্থনা করতে দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘আমরা ইসরাইলের কাছে আবেদন করছি, অতীতের রীতি মেনে রমজানের সময় তারা যেন শান্তিপূর্ণ প্রার্থনার অনুমতি দেয়।’ তার মতে, ‘ইসরাইলের স্বার্থেই পশ্চিম তীর ও সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে দেয়া উচিত নয়।’ রমজান মাস শুরু হচ্ছে ১০ মার্চ থেকে। বাইডেন এর আগে জানিয়েছিলেন, আগামী সোমবারের মধ্য়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, ডয়চে ভেলে।
cbntoday/1march/ZI/gaza