দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগ ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না /আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হলে- সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১০ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক স্মরণ সভায় এ কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা এবং মন্ত্রীরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেথ ইস্যু। তারা যা-ই বলুক না কেন, এটাই এখন সব চাইতে হট ইস্যু। বিএনপি মনে করে সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। এই সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মীরা এতো চুরি আর দুর্নীতি করেছে যে, তারা দেশের একটাও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
সুতরাং এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনও কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে মানুষ যাতে তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, সেজন্য নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সরকার জনগণের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, নির্বাচনের ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের লোকেরা নিজেরাও জানেন, তারা এতো চুরি করেছেন যে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা, সংসদে ১০ শতাংশের বেশি ভোটও পাবেন না বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখেছে, সেই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আবার সেরকম নির্বাচনে ফেরত যাবে না মানুষ। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের সংলাপে ডেকেছিলেন, তার প্রতি সম্মান রেখে আমরা গিয়েছিলামও। আমরা মনে করেছিলাম, আলোচনার মাধ্যমে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের অবস্থা তৈরি হলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। তাদের পছন্দের সরকার গঠন হবে।
ফখরুল বলেন, গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন, যখন নির্বাচন চলবে, নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে তখন কাউকে আর গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে না। এই কথায় কে বিশ্বাস করবে? এটা সেই রাখাল বালকের গল্পের মতো। যে গ্রামের মানুষকে বোকা বানাতে প্রায় চিৎকার করতো বাঘ-বাঘ বলে। গ্রামবাসী লাঠি-সোটা নিয়ে বেরিয়ে আসতো আর রাখাল বালক হাসতো। শেষে একদিন যখন সত্যি-সত্যি বাঘ আসে, সে চিৎকার শুরু করলেও কেউ আসে না। আমরা সেরকম ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতারণার শিকার হয়েছি। আর দেশের মানুষ প্রতারণার শিকার হবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তাদের সেসব অন্যায় কেউ কোনোদিন ভুলবে না। কারণ তারা কখনও তাদের ওয়াদা রক্ষা করেনি। জাতির সামনে তারা যেসব বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে, ওয়াদা করেছ বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে- তা রক্ষা করেনি।
বিএনপি অবশ্যই নির্বাচন চায় এবং সে নির্বাচনে অংশও নেবে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার থাকতে হবে, তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে। জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচন করবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। কারণ জনগণই এই দেশের মালিক, অন্য কেউ নয়। সংবিধানে বলা আছে- দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। তাই, তাদের (সরকার) বলছি, ক্ষমতা ছাড়ুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। তারাই নতুন নির্বাচন কমিশন করবে, যারা নির্বাচনের আয়োজন করবে। জনগণ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ডে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এর কারণ কী? কারণ হচ্ছে- ভয়াবহ চুরি, নজিরবিহীন দুর্নীতি। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ বিমান নাকি এয়ারবাস কিনবে! যে বিমান সংস্থা নিজেরা চলতে পারে না, দুর্নীতির আখড়া, প্রতি মুহূর্তে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে- সেই বিমান কেন, কীভাবে এয়ারবাস কিনছে? আমি কিছুদিন বিমান মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। বিমান বোয়িং কাউকে কমিশন দেয় না। তারা এয়ারবাস কিনছে এজন্য যে, কমিশন পাওয়ার জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চুরি। এই চুরির কিছু অংশ বিদেশে পাচার করবে, বাকিগুলো দিয়ে আগামী নির্বাচনের টাকাও হয়ে যাবে।
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, সংগঠনের মহাসচিব এন, তরুণ দে প্রমুখ।
তথ্যসূত্র: বিভিন্ন বাংলা সংবাদ মাধ্যম
সিবিএনটুডে/১১জুন/জই/ঢাকা