বাজেট অধিবেশন শুরু।ডা.জাফরুল্লাহ ও নায়ক ফারুকের ওপর সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে।আজ বুধবার (৩১ মে) বিকাল ৫টায় শুরু হয়েছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেওয়া হয়। চলতি অধিবেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- আ স ম ফিরোজ, তানভীর শাকিল জয়, ড. প্রাণ গোপাল দত্ত, রুস্তম আলী ফরাজী এবং বেগম আনজুম সুলতানা। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা অগ্রবর্তীতার ভিত্তিতে সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
এ অধিবেশনেই বৃহস্পতিবার (১ জুন) আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট পেশ করবেন বলে স্পিকার সংসদের বৈঠকে জানান।
এটি চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন। এ অধিবেশনে বৃহস্পতিবার (১ জুন) আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উত্থাপন করা হবে।
প্রতি বছর বাজেট অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ জুন বা তার আগের দিন (২৯ জুন) পাস হলেও এবার কোরবানির ঈদের কারণে কিছুটা আগে
ভাগে পাস করা হবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে গত ১৪ মে সংসদের ২৩তম অধিবেশন আহ্বান করেন।
ডা..জাফরুল্লাহ ও নায়ক ফারুকের ওপর সংসদে শোক প্রস্তাব:
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠানের (নায়ক ফারুক) মৃত্যুতে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে।
সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়নের পর স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এটি চলমান একাদশ
ঢাকার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮১ বছর বয়সে গত ১১ এপ্রিল রাত ১১টায় মৃত্যুবরণ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। অন্যদিকে গত ১৫ মে তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফারুক। এছাড়া প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব আনা হয়।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় বলেছেন, নায়ক ফারুক মুক্তিযুদ্ধ, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা ও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করতে নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন।
এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করেছেন তিনি। অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অবদান রেখে গেছেন। দুঃখের বিষয় আমরা একে একে সব মুক্তিযোদ্ধাদের হারিয়ে ফেলছি। তিনি শুধু রাজনীতিই করেননি, সাংস্কৃতিক জগতেও অবদান রেখেছেন। চলচ্চিত্র জগতে অবদান রেখেছেন। আমরা তাঁকে জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত করি। আমাদের সংস্কৃতির সেবায় তার মৃত্যু এখানেও আমাদের বিরাট ক্ষতি। সাংস্কৃতিক কর্মীরা সবসময় আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের পাশে থেকেছে। প্রত্যেকটা আন্দোলন-সংগ্রামে সাহস যুগিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তাঁর নামটি মুছে ফেলা হচ্ছিলো। নামটি নিতেই চাচ্ছিলো না। তখন সাংস্কৃতিক কর্মীরাই এগিয়ে এসেছিল। বঙ্গবন্ধুর নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা, মুক্তিযুদ্ধের গানগুলোকে সামনে নিয়ে আসা; আবার সেই স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করার বলিষ্ঠ ভূমিকা তিনি রেখেছেন। তার অনেক অবদান এদেশের জন্য রয়েছে। আজকে খুব কষ্ট লাগছে, তিনি এভাবে চলে গেলেন। আসলে জন্মালে তো মরতেই হবে- এটাই তো বাস্তব কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দাদির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আজ ৩১ মে আমি আমার দাদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাতা ১৯৭৪ সালের এই ৩১ মে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আমি আজকের দিনে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমার দাদি জন্ম দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে, যিনি আমাদের এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা। আমার দাদি সায়রা খাতুন তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, আমি তাঁর জন্য জাতির কাছে দোয়া চাই।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নুর, মেহের আফরোজ চুমকি, হাবিব হাসান, বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের, জাতীয় পাঠির কাজী ফিরোজ রশিদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
অধিবেশনের প্রথম দিন শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে অন্য কার্যক্রম স্থগিত করে বৈঠক মুলতবি করা হয়।
সিবিএনটুডে/৩১মে/জই/সংসদ